January 12, 2025, 2:17 pm

প্রবাসী বাবা-ছেলের রহস্যজনক মৃত্যু, পুলিশ হেফাজতে ১২ জন

খায়রুল আলম সুমন||

সিলেট জেলার ওসমানী নগর উপজেলায় প্রবাসী পরিবারের ৫ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করার পর ২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন মৃত রফিকুল ইসলামের শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন ও শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম। যে কক্ষে ওই ৫ জনকে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার পাশের কক্ষেই ছিলেন এই স্বজনরা।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, বিষক্রিয়ায় অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
মারা যাওয়া ২ জন হলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলাম। অসুস্থ হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রফিকুলের স্ত্রী হুছনারা বেগম এবং দুই ছেলে-মেয়ে সাদিকুল ইসলাম ও সামিরা ইসলাম।
সিলেট জেলার ওসমানী নগর উপজেলার  তাজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলচন্ডী সড়কের একটি বাসা থেকে মঙ্গলবার দুপুরে অচেতন অবস্থায় পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করেছে। হাসপাতালে নেয়ার পর রফিকুল ও তার ছোট ছেলে মাইকুল মারা যান। এই প্রবাসীরা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেই বাসার মালিক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলক। ১৮ জুন দেশে এসে প্রবাসী পরিবারটি এ বাসা ভাড়া নেয় জানান ঝলক। তাদের বাড়ি ওসমানী নগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নে। স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঝলক বলেন, পরিবারটি ১৮ জুন তার বাসায় ওঠে। পরদিন গ্রাম থেকে রফিকুলের শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক ও শ্যালকের স্ত্রী এসে সেখানে ওঠেন। ঘটনার খবর পেয়ে রফিকুলের আরেক শ্যালক সেবুল আহমদ গ্রাম থেকে সেখানে আসেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছিল। ছোট ছেলে মাইকুল ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার চিকিৎসা করাতে গত ১২ জুলাই স্বপরিবারে দেশে ফেরেন রফিকুল। এক সপ্তাহ ঢাকায় ছেলের চিকিৎসা শেষে ১৮ জুলাই তাজপুরের ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় ভাড়া নিয়ে সেখানে ওঠেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেখা গেছে, ওই বাসায় ৩টি শয়নকক্ষ, ১টি রান্নাঘর ও ১টি খাবার কক্ষ রয়েছে। অচেতন অবস্থায় ৫ জনকে একটি শয়নকক্ষেই পেয়েছে পুলিশ। সেই কক্ষের আসববাপত্র এলোমেলো পড়ে আছে। ওসমানী নগর থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মাইনুল ইসলাম বলেন, রফিকুল পরিবার নিয়ে যে বাসায় ভাড়া ছিলেন, সেই বাসাতেই অন্য কক্ষে তার শ্বশুর, শাশুড়ি, এক শ্যালক ও শ্যালকের স্ত্রী ছিলেন। তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এ পর্যন্ত ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কিছু পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দলও। সিআইডি সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা চিকিৎসকের বরাতে জানান, খাবারে বিষক্রিয়া থেকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমরা বিভিন্ন আলামত জব্দ করে এনেছি। বিশেষত ওই বাসার সব খাবার নিয়ে এসেছি। এগুলো রাসায়নিক ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। আমরা সবদিক বিবেচনা করেই তদন্ত করতেছি। সুত্রে জানা যায়,
সোমবার রাতের খাবার শেষে রফিকুল তার স্ত্রী সন্তানসহ একটি কক্ষে এবং তার শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও মেয়ে সাবিলা পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে তারা ডাকাডাকি করার পরও রফিকুল বা তার স্ত্রী-সন্তানদের কেউ রুমের দরজা না খোলায় ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশ ডাকা হয়। দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশ গিয়ে কক্ষের দরজা ভেঙে ওই ৫ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসক রফিকুল ও মাইকুলকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ওই কক্ষের দরজা ভাঙার পর দেখা গেছে, দুই বিছানার মধ্যে একটিতে রফিকুল, হুছনারা ও তাদের মেয়ে সাবিরা ছিলেন। আরেক বিছানায় ছিলেন মাইকুল ও সাদিকুল। তাদেরকে স্বাভাবিকভাবে শুয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গেলেও এলোমেলো ছিল বিছানা ২টি।
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর